মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা সহাকারী কমিশনার (ভূমি) অফিস যেন দূর্নীতির আখড়া। বাড়তি টাকা না দিলে ভোগান্তি চরমে। আর টাকা দিলে স্বস্তিতে মিলে গ্রাহক সেবা। সাটুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে বুধবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে অবস্থান করেন বিভিন্ন স্থানীয় গণমাধ্যমর্কর্মীরা। প্রতি বুধবার বিভিন্ন শুনানির দিন ধার্য করা হয়। সকাল থেকেই ভূমি অফিসের গোল চত্তর ও অফিস আঙিনায় থাকে গ্রাহকের উপচে পড়া ভির। অপেক্ষা করছেন কখন কাদের শুনানির জন্য ডাক আসে। কিন্তু অভিযোগ আছে, সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) তানভীর আহমদ অফিসে এসে চা, নাস্তা খাওয়ার নামে ঘন্টার পর ঘন্টা রুমে বসে থাকেন। তার দপ্তরে যেতে হলে, গ্রাহকের ১ থেকে ২ ঘন্টা বাহিরে অপেক্ষা করতে হয়।
এদিন ২৫ টা শুনানির দিন ধার্য থাকলেও দুপুর ১২ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র পাঁচটি শুনানী।
তবে সাটুরিয়ার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে প্রয়োজনে দুদকের অভিযান চান অনেক ভুক্তভোগী। শুধু কর্মকর্তাদের আশ^াসের বাণী নয়। দালাল ও সিন্ডিকেট মুক্ত অনলাইনেই সকল নাগরিক সুবিধা পাবে সাটুরিয়া বাসী এমটাই চাওয়া উপজেলাবাসীর।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, এ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এমনকি সহকারী কমিশনার (ভূমি) যানবাহন চালকের সাথে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র গড়ে উঠেছে। নামজারীর ডিসি আর কাটতে সরকারী ফিস লাগে মাত্র ১১০০ টাকা। কিন্তু কোন ঝামেলা ছাড়া নামজারী বা জমির খারিজ করতে দালালের মাধ্যমে প্রতিটির জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিচ্ছে। আবার কোন ওয়ারিশ কিংবা রেকডমূলে ঝামেলা থাকলে খারিজ করতে প্রতি শতাংশ জমির জন্য দর শরু হয় এক হাজার টাকা থেকে। দালাল ছাড়া নামজারি/খারিজের জন্য অনলাইনে আবেদন করলে, সেটা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার নিকট তদন্ত শেষে আসে উপজেলা ভূমি অফিসে। কিছুদিন পর কোন দালালের মাধ্যমে তদবির না করলে সেটা কোন কারন দেখিয়ে খারিজ আবেদন বাতিল করে দেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমদ।
শুনানিতে আসা গর্জনা গ্রামের আব্দুল মজিদ বলেন, গর্জনা মৌজার পৈত্বিক সূত্রে জমির মালিক হচ্ছি ৯.৭৫ শতাংশ। অনলাইনে আবেদন করি তাই। কিন্তু খারিজ করার পর দেখি ১৩ শতাংশ। আমি আমার ওয়ারিশদের ঠকাব না। আমি এখন উল্টা মিসকেসের আবেদন করছি বাকী জমি ফেরত দিয়ে সংশোধন করার জন্য। ঢাকায় একটি অফিসে জব করি। দিনের পর দিন ঢাকা থেকে সাটুরিয়ায় আসতে ভাল লাগে না।
ফুকুরহাটি ইউনিয়নের আব্দুস সামাদ সামু বলেন, আমি যার নিকট জমি কিনেছি, আর, এস রেকর্ড এ তার নাম নাই। এ নিয়ে মানিকগঞ্জের জজ কোর্টে মামলা করি। এতে আমি রায় পেয়েছি। এর মধ্যে আমার কেনা জমি আরেকজনের নামে খারিজ করে দিয়েছে। এখন আমি ঐ ভূয়া খারিজের নামে মিসকেস আবেদন করি ১০ মাস আগে। এখন আমার মিস কেস নিয়ে শুধু টালবাহানা করছে।
বালিয়াটি ইউনিয়নের গর্জনা গ্রামের ইমারত হোসেন বলেন, আমি জমি কিনি ১৪ শতাংশ দুই দাগ থেকে। জমির পূর্বে মালিকের আলকাছ আলী মালিক হচ্ছে ৯ শতাংশ। কিন্তু খারিজ করে নিছে ১২ শতাংশ। এখন আমি অনলাইনে নামজারি আবেদন করতে গেলে অনলাইনে আবেদন নিচ্ছে না। জমির দলিল আছে, পর্চা আছে কিন্তু আমি জমির খারিজের জন্য আবেদন করতে পারছি না। আমার প্রশ্ন হল রেকর্ড মূলে মালিক ৯ শতাংশ তাকে কিভাবে ১২ শতাংশ জমি খারিজ দিল ওই ভূমি কর্মকর্তা?
এ বিষয়ে দরগ্রাম ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ১৫ বছর আগে একটি জমি ক্রয় করছি। যার নিকট থেকে ক্রয় করেছি তার নামে খারিজ করা । পরে আমার নামেও খারিজ করেছি। কিন্তু আমার খারিজের বিরুদ্ধে আরেকজন টাকা দিয়ে মিসকেস করেছে। আমি গত ৩ বছর ধরে শুনানীতে অংশ নিলেও আমাকে মুক্তি দিচ্ছে না।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সাটুরিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভূমি অফিসের যে কোন সেবা নিতে গেলে হয়রানি করা হয়। পরে দালালের মাধ্যমে গেলে তা নিদির্ষ্ট সময়ের আগেই করে দেওয়া হয়। প্রথমে যে কোন কম্পিউটার দোকন থেকে জমির খারিজের আবেদন করা হয়। সেটা দালাল ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে অনুমোদন করে উপজেলায় নিয়ে আসেন। কিন্তু টাকা লেনদেন হয় গোপনে। টাকা পরিশোধ হয়ে গেলে আবেদন নাম্বার লিখে রাখা হয়। সেটি সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) তানভীর আহমদের নিকট অফিসের ষ্টাফ সরবরাহ করলে তিনি খারিজের চূড়ান্ত অনুমোদন করে দেন। এমনভাবে এ অফিসের সকল কাজ এখন দালালের মাধ্যমেই সম্পাদন করা হচ্ছে।
সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) তানভীর আহমদ বলেন, তদন্তের স্বার্থে মিস কেসের রায় দিতে একটু সময় লাগে। দ্রুত করলে ভূল হলে গ্রাহকরা উচ্চ আদালতে গিয়ে হয়রানি হওয়ার আশংকা থাকে। টাকা ছাড়া নামজারি হয় না, এ বিষয়ে তিনি আরো বলেন, সংবাদকর্মীরা সহযোগীতা করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।